দুই মাস ধরে ডলারের দাম বাড়ছে। আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। এর বিপরীতে প্রতিদিনই দুর্বল হচ্ছে টাকা। এদিকে খোলা বাজারে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৯ টাকা।

 

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৫ টাকা ৩৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল। আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) লেগেছে ৮৫ টাকা ৪৭ পয়সা। এদিকে ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকার কাছাকাছি দরে। এরমধ্যে  রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বুধবার ৮৭ টাকা ২০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৮৭ টাকা ৪০ পয়সায়। ব্যাংকের বাইরে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে প্রতি ডলার ৮৯ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

 

তথ্য বলছে, দেড় মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৬৭ পয়সা বা দশমিক ৮০ শতাংশ দর হারিয়েছে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকা। তবে পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় এতে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

 

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বাড়ায় ডলারের দাম বাড়ছে। গত অর্থবছরে প্রচুর রেমিট্যান্স আসায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে গিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে। এছাড়া আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বাড়লে যেকোনও পণ্যের দাম বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম বাড়ার সুযোগ করে দিয়ে ঠিক কাজটিই করছে বলে আমি মনে করি।’

 

এর ফলে রফতানি খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হচ্ছে। আবার প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। তাই টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না এসব ব্যবসায়ী।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত (সাড়ে ১২ বছরে) ডলারের তুলনায় টাকার মান কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

 

অর্থাৎ ১২ বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে পণ্য বা সেবা কিনতে ১০০ টাকা লাগতো, বর্তমানে তা কিনতে ১২৪ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যেত ৬৯ টাকা। আর গত রবিবার প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা দরে। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে প্রতি ডলারের মূল্যমান ছিল ৭৯ টাকা ৭৫ পয়সা।

 

বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্বাধীনতার পর থেকে সরকার নির্ধারণ করে দিতো। ২০০৩ সালে এই বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এরপর থেকে আর ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট’ নীতি।

 

এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার পর্যন্ত ৬০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ‘অর্থনীতি সচল হচ্ছে। যেটার প্রমাণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে।’